মোঃ মিনারুল ইসলাম
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি
দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা বাজারে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকের এক ম্যানেজারকে 'হানি ট্র্যাপ' বা মধুচক্রে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগে জান্নাতুল ফেরদৌস (ছদ্মনাম) নামের এক যুবতী স্থানীয় জনতার হাতে আটক হয়েছেন।
ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। পরে তাকে কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়।
জানা গেছে, গত রোববার (গতকাল) ব্যাংক বন্ধ থাকার পর বিকেল আনুমানিক পাঁচটার দিকে ঘটনাটি ঘটে। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকের ম্যানেজার খলিলকে যদুপুর পারঘাটা গ্রামের শিপন আলীর মেয়ে পরিচয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস নামের ওই নারী ফোন করেন।
ফোনে তিনি জানান, "আমার বাড়ি মদনা, আমি আমার ভাবির নামে একটি অ্যাকাউন্ট খুলবো, আপনি আসবেন।"
ম্যানেজার খলিল ব্যাংকের নিচে গিয়ে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, মেয়েটি তাকে জোর করে ওপরে অর্থাৎ ব্যাংকের অভ্যন্তরে গিয়ে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। ম্যানেজার খলিল সরল বিশ্বাসে ওপরে ওঠেন।
এর কিছুক্ষণ পরেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চারজন যুবক দ্রুত পিছু পিছু ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে। তারা ম্যানেজার খলিলকে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।
এসময়ই পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। অভিযুক্ত মেয়েটি ম্যানেজার খলিলের কাছে সরাসরি ২ লাখ টাকা দাবি করে বলেন, "আমাকে ২ লাখ টাকা দেন, আমি সব মিটিয়ে দিচ্ছি।" টাকা দিতে ম্যানেজার খলিল অস্বীকৃতি জানালে, উপস্থিত এলাকাবাসী যারা বিষয়টি লক্ষ্য করছিলেন, তাদের কাছে ঘটনাটি দ্রুত পূর্বপরিকল্পিত হিসেবে স্পষ্ট হয়ে যায়।
ঘটনার আকস্মিকতা এবং মেয়েটির অর্থ দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় জনতা দ্রুত সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে অভিযুক্ত যুবতীকে আটক করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়। পরে আটক যুবতীকে কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়।
কার্পাসডাঙ্গা বাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর রাসেল এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, "মেয়েটি ম্যানেজারকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফাঁদে পড়েছে। এ ধরনের প্রতারণা থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।"
পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর অভিযুক্ত মেয়েটির আচরণ আরও সন্দেহজনক হয়ে ওঠে। পুলিশ সূত্র এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, মেয়েটি জিজ্ঞাসাবাদে নিজের নাম-ঠিকানা একাধিকবার পরিবর্তন করতে থাকে। এতে করে তার অসৎ উদ্দেশ্য এবং প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।
ব্যাংকের অফিস সহকারী শুকুর আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, "ঘটনাটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম, ম্যানেজার আমার সামনেই ব্যাংকের তালা খুলেছেন।
মেয়েটির বিচার হওয়া উচিত।" ম্যানেজার খলিল নিজেও বলেন, "আমি মেয়েটিকে চিনিও না। সে অ্যাকাউন্ট করার কথা বলে আমাকে ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিল।"
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, "আমি কোনো মন্তব্য করব না, কিছুই বলব না। আপনারা এখান থেকে চলে যান।"
অন্যদিকে, স্থানীয়রা আটক যুবতীকে 'ধান্দাবাজ প্রকৃতির' বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, এ ধরনের চক্র ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীদের টার্গেট করে এভাবে ফাঁদ পেতে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। তারা মেয়েটির কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।
কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকরাম হোসেন জানিয়েছেন, "মেয়েটিকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে আনা হয়েছে। মেয়েটির কথাবার্তায় অসঙ্গতি থাকায় তাকে অধিকতর তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দামুড়হুহা মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।"
এ ঘটনায় কার্পাসডাঙ্গা বাজারসহ পুরো উপজেলায় প্রতারক চক্রের ফাঁদ সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ফারুকী
মোবাইল নং ০১৭১৩৮৭৮১৯২
প্রধান বার্তা সম্পাদকঃ মোঃ মাসুদ পারভেজ রুবেল
জিমেইলঃ notunkalom@gmail.com
ওয়েবসাইটঃwww.notunkalom.com
©️দৈনিক নতুন কলম দ্বারা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত