
আলমগীর শরীফ, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে চাচা মো. নুরুজ্জামান হাওলাদার (৫০)-এর বিরুদ্ধে ভাতিজা মো. ইকবাল মাহমুদ (৩৭)-এর নির্মাণাধীন বাড়িতে হামলা, দেয়াল ও সীমানা প্রাচীর ভাঙচুর, ফলজ গাছ কেটে ফেলা এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার ২ অক্টোবর২০২৫ ইং রাত ১১ ঘটিকার দিকে উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের উত্তর ছিটকি গ্রামের নিমহাওলা এলাকায়।
ভুক্তভোগী ইকবাল মাহমুদ অভিযোগ করেন, আমার চাচা নুরুজ্জান আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অস্ত্রধারী ভাড়াটে লোকজন নিয়ে বাড়িতে হামলা চালায় রাত ১১টার দিকে। নুরুজ্জামানসহ অন্তত ১০/১২ জন লাঠি, রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল ও পিস্তল নিয়ে আমার বাড়িতে প্রবেশ করে দেয়াল ও সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে, ফলজ গাছ কেটে ফেলে এবং আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তিনি আরও বলেন, আমি ১৪৪ ও ১৪৫ ধারায় আদালতে মামলা (নং ৪৪৩/২০২৫) দায়ের করেছি। পরে আদালত ১৮৮ ধারায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। চাচা ও তার ভাড়াটে অস্ত্রধারীরা আমার বসতঘরে আগুন দেওয়ার হুমকি দিয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতনের মিথ্যা মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে এবং বাজারে যাওয়ার সময় অস্ত্রসহ আমার ওপর হামলার চেষ্টা করেছে।
ইকবালের অন্য চাচা শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, আমাদের তিন ভাইয়ের জমি অনেক আগেই ভাগাভাগি হয়ে গেছে, তখন নুরুজ্জামান তার প্রাপ্য অংশ না নিয়ে আমার অংশ দাবি করে মোট পাঁচটি মামলা করে, পরে ওই মামলাগুলোর রায় আমার পক্ষে আসে। ভাই মারা যাওয়ার পর আমি আমার প্রাপ্য অংশ থেকে এওয়াজ বদলের মাধ্যমে ইকবালকে জমি দিয়েছি। সে তার বৈধ জমিতেই ঘর নির্মাণ করছে। কিন্তু নুরুজ্জামান নিজের অংশের চেয়ে বেশি জমি দখলের চেষ্টা করছে। সে নিজের অংশ বুঝে নিলে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
অভিযুক্ত নুরুজ্জামান হাওলাদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। বরং ইকবাল মাহমুদ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। আমি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে চলাফেরা করি। আমার স্বজনরা আমাকে ২০১৯ সালে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছে এবং আমার জমি দখলের চেষ্টা করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী সুলতান হোসেন (৬৫) বলেন, সেদিন রাতে আওয়াজ শুনে টর্চলাইট নিয়ে বাইরে আসি, দেখি নুরুজ্জামান কিছু লোক নিয়ে ইকবালের বাড়ির দিকে যাচ্ছে। তারা আমাকে লাইট নিভিয়ে ঘরে যেতে বলে। পরে ঘরে চলে যাই। আরেক প্রতিবেশী রুহুল আমিন (৫২) জানান, আমি জানালা দিয়ে দেখি নুরুজ্জামানসহ ১০–১২ জন অস্ত্রধারী লোক ইকবালের বাড়ির দিকে যাচ্ছে। পরে গিয়ে দেখি দেয়াল ভাঙা, ফলজ গাছ কেটে খালে ফেলে দেওয়া, আর সীমানা প্রাচীরের কাঁটাতার উপড়ে বিভিন্ন দিকে ফেলে রাখা।
কাঠালিয়া থানার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষই ওয়ারিশসূত্রে জমির মালিক। বাদী ইকবাল মাহমুদ ০.৪৬ শতাংশ এবং বিবাদী নুরুজ্জামান হাওলাদার ৩.৩১ শতাংশ জমি দখলে রেখেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভূমি) জহিরুল ইসলাম জানান, তফসিলভুক্ত জমির মোট আয়তন ১১.৩৩ শতাংশ, যার মধ্যে বিরোধপূর্ণ জমি ৩.৭৭ শতাংশ। বাদী ওয়ারিশমূলে ও মৌখিক এওয়াজমূলে মোট ১১.৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে ৮.০২ শতাংশ জমি ভোগ দখলে আছে ও বিবাদী ওয়ারিশ ও দলিলমূলে ৩.৩১ শতাংশ জমি ভোগ দখলে আছে। যা সরেজমিন তদন্তে প্রতীয়মান৷ উত্তরে রুহুল আমিনের বাড়ি, দক্ষিণে বাদীর বসতবাড়ি, পূর্বে ইউনুছ আলী হাং, এবং পশ্চিমে সরকারি রাস্তা৷ সেখানে বর্তমানে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা নেই। তবে বিরোধ নিরসনে স্থানীয়ভাবে সমঝোতার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনিক নথি অনুযায়ী, আদালতের স্থায়ী ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও নুরুজ্জামান হাওলাদার তা অমান্য করেছেন। এ কারণে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ফৌজদারী কার্যবিধির ১৮৮ ধারায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য, পারিবারিক এ জমি সংক্রান্ত বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে চলমান। প্রশাসন ও আদালতের নজর থাকা সত্ত্বেও উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও দখলচেষ্টা এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। আদালতের আদেশ অমান্য ও সম্পত্তি দখলের চেষ্টায় পারিবারিক বিরোধ আরও জটিল আকার ধারণ করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখলেও স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।