“সত্য বলে কথা”
মাহবুবুল আলম ফারুকী
সত্য সব সময় একটু তিক্তই হয়ে থাকে। যে বলে তার জন্যও যেমন হুমকি স্বরূপ। আর যাকে বলে তার জন্যও তেমনি বিরক্তিকর। মাসিক শিক্ষাঙ্গন মে/০৯ সংখ্যায় আমার লেখা নিবন্ধ ডিজিটালের তেলেসমাতি প্রকাশিত হওয়ার পর আমাকেও প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু সত্য যতই তিক্ত হোক আমাকে সত্যই বলতে হবে। সত্য বলার অনেক কিছুই ছিলো। কিন্তু আমার এই সংকীর্ণ লেখায় তা তুলে ধরা সম্ভব নয়। ফলে আমি হালকা কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরার মাধ্যমে সত্য প্রকাশ করার প্রয়াস চালাচ্ছি। যাক। মূল কথা হলো- স্বাধীনতার ৩৮ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের উন্নতি আমরা করতে পারিনি। দেশটি ক্রমেই অবক্ষয়ের দিকেই পা বাড়াচ্ছে। একে ফিরানোর মতো কৌশল আমাদের নেই। আমরা যে দিকে তাকাই সে দিকেই অবক্ষয়ের ছোঁয়া দেখতে পাই। যদি আমরা রাজনৈতিক অবস্থার দিকে! তাকাই। তখন দেখতে পাই তার করম্নণ পরিণতি। দেশের সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, দেশব্যাপী চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ অসংখ্য অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে, একমাত্র রাজনৈতিক কারণে। দেশকে গড়ার জন্য। দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল তৈরি হয়েছে ও হচ্ছে। কিন্তু দেশকে গড়ার মতো সৎ ও দক্ষ দল বা নেতা এখনো তৈরি হয় নি।। যদিও দুই-একটি দল গঠিত হয়েছে। তারাও সংখ্যা স্বল্পতার কারণে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। দুঃখজনক হলেও বলতে হয় রাজনৈতিক নেতারা আজ দেশ গড়া বাদ দিয়ে নিজের সংসার গড়ায় ব্যস্ত। যাদের উপর দেশ গড়ার গুরুদায়িত্ব। তারাই আজ দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। যাদের কথা ছিল জনগণকে ভালবাসার, জনগণকে সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার। কিন্তু তারাই আজ জনগণের ক্ষতিসাধনে সদ্যপ্রস্তুত।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য সরকারীদল বা বিরোধীদল কেউ দেশের উন্নয়ন কাজে এগিয়ে আসছে না। সামাজিক অবস্থার দিকে একটু গভীর মনোযোগ দিলেই বোঝা যাবে কতটুকু অবক্ষয় হয়েছে। সমাজ থেকে ভ্রাতৃত্ববোধ উঠে গেছে অনেক পূর্বেই। একসময় দেখা যেত সমস্যা যত বড়ই। হোকনা কেন তা সমাজেই নিস্পত্তি হয়ে যেত। তাতে অন্য কিছু যাই হোক না কেন; তাতে সমাজ এবং ব্যক্তির নিজের মান-সম্মান রক্ষা পেত। এখন সামান্য সমস্যা হলেই থানা টু জেলা পর্যন্ত গড়ায় এতে লাভের অংশ বাদী-বিবাদী কারো নয়। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে সকল ফায়দা হাছিল করে পুলিশপক্ষ। সবচেয়ে বড় দুঃখ জনক ঘটনা হচ্ছে গ্রামের কিছু লোকের দারিদ্রতাকে পুঁজি করে কিছু এনজিও গোষ্ঠী। সহজ-সরল মহিলাদেরকে মানসম্মানের মাথা খুইয়ে রাস্তায় বের করে এনেছে। এতে কিন্তু দরিদ্রতা এতটুকুও কমেনি বরং বেড়েছে তিনগুন। হয়েছে, অলস, বেকার, নির্যাতিত, নিপীড়িত, ভিটা ছাড়া ইত্যাদি। মনে পড়ে শাসসুদ্দীন আবুল কালাম রচিত ‘পথজানা নাই’ গল্পের কথা। সেখানে এন.জি.ওর কথা যদিও উল্লেখ নেই, তবুও। অনেকটাই তাদের সাথে সামঞ্জস্যশীল। সেখানে গহুর আলীর স্ত্রী হাজেরা দালালের হাত ধরে চলে যায়। আর বর্তমানের এই এন.জি.ও ঐ সব দালালেরই নামান্তর। সাংস্কৃতিক অবস্থার দিকে লক্ষ্য করলে কান্না। এবং আফসোস ছাড়া কোন উপায় নাই।। তাকিয়ে দেখুন বর্তমান চলচ্চিত্রের দিকে। বর্হিবিশ্বের কথা না হয় বাদই দিলাম। খোদ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দিকে নজর দিন। উলঙ্গ বেহায়াপনা কাকে বলে জানতে পারবেন। নাম না বলে পারছি না। শরিফ উদ্দিন মায়ের গান, ভান্ডারী গান দিয়েযাত্রা শুরু করলেও তার গানে প্রচুর অশ্লিলতা লক্ষ্য করা যায়। গত কিছুদিন পর্বে এক কম্পিউটারের দোকানে ১২/১৫ বছর বয়সী এক বালকের মোবাইলে একটি গান শুনতে পেলাম “আঁধার রাতে বন্ধ আমার……
লক্ষ্য করে যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু ছানাবড়া। বাংলাদেশের মতো একটা দেশে এই রকম পর্নোগ্রাফি তবুও আবার ১২/১৫ বছর বয়সী বালকের হাতে, সত্যি অবাক লাগে। আর বাস্তব সংস্কৃতির দিকে তাকালে তো কোন কথাই নেই। নিউ মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি মল সহ বড় বড় মার্কেট এবং পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে লক্ষ্য করলে যে দৃশ্য চোখে পড়ে তার বর্ণনা আমার লেখনিতে প্রকাশ করার মতো নয়। মেয়েদের পোশাক যে হারে ছোট হওয়া শুরু করেছে তাতে আমার মনে একটি প্রশ্ন জাগে অদূর ভবিষ্যতে তাদের গায়ে জামা থাকবে কিনা? বর্তমানের যুব সমাজকে ধ্বংস করতে বর্তমানের এই সংস্কৃতিই যথেষ্ট। অর্থনৈতিক অবনতি কতটুকু হয়েছে তা জনগণের নিকট সুস্পষ্ট। দেশে অর্থনৈতিক মন্দা আর বাজারে আগুন। আর এই আগুন যেভাবে দাউদাউ করে জ্বলছে। কেউ একে নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবে কিনা সন্দেহ। আর পারিবারিক অবস্থার কথা বলবেন। সেখান থেকে শাস্তি নামের সুখ পাখিটি আরো আগেই খাঁচা ভেঙে পালিয়ে গেছে। সামান্য বিষয় নিয়ে পিতা পুত্রকে, পূত্র-পিতাকে, ভাই-ভাইকে খুন করছে। মানছে না তারা ধরাবিধি আইন। ব্যক্তি জীবনে অনেকের জীবনে নেমে এসেছে, চারিত্রিক অবণতি। আসক্ত হয়েছে মদ ও জুয়ায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও চিরাচরিত সত্য যে, সমাজে এই সব অপকর্মের প্রতিবাদ করার মতো এখনো যৎসামান্য লোক আছে। তবে তারা নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার কারণে এগিয়ে আসতে পারছে না।
অতএব এ দেশকে সকল প্রকার অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে হলে প্রথমত জনবল। গঠন করতে হবে। দ্বিতীয়ত সকল খাতের অবক্ষয়ের মূল কারণ গুলো উদঘাটন করে তার প্রতিকার করতে হবে।