মাহবুবুল আলম ফারুকীঃ- “রাজনীতি” শব্দটির অর্থ হলো রাষ্ট্র পরিচালনা, শাসনব্যবস্থা এবং ক্ষমতার ব্যবহার ও বণ্টন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড। এটি দুইটি শব্দের সংমিশ্রণ: “রাজা” (অর্থাৎ শাসক) এবং “নীতি” (অর্থাৎ নীতি বা নীতিমালা)। সাধারণভাবে, রাজনীতি হলো একটি সমাজে বা রাষ্ট্রে জনগণের কল্যাণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া।
রাজনীতির মূল দিকগুলো হলো:
- নেতৃত্ব ও শাসন
- ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ও ভাগাভাগি
- আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
- জনগণের অধিকার ও মত প্রকাশ
রাজনীতি ব্যক্তিগত, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন রকম প্রভাব ফেলে এবং এটি সমাজের কাঠামো ও উন্নয়নের পথনির্দেশক হতে পারে।
সুস্থ রাজনীতিঃ সুস্থ রাজনীতি হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে রাজনৈতিক কার্যক্রম জনগণের সার্বিক উন্নতি ও সমাজের কল্যাণের জন্য পরিচালিত হয়।
এর কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কাজের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করে। উদাহরণস্বরূপ, সরকারি বাজেট কীভাবে খরচ হচ্ছে, তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
জনকল্যাণমুখী নীতি: রাজনীতিবিদরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। যেমন, কোনো দেশে সবার জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা চালু করা।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ: মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং আইনের শাসন মেনে চলা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যে দেশে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয় এবং ক্ষমতার অপব্যবহার না হয়।
সহযোগিতা ও ঐক্য: রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলেও জাতীয় স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করে। যেমন, সংকটকালে (মহামারী বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে) সব দল মিলে সমাধান খুঁজে।দুর্নীতির অভাব: ক্ষমতার অপব্যবহার বা জনগণের সম্পদ লুটপাট না হওয়া। উদাহরণ হিসেবে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর (যেমন ডেনমার্ক, নরওয়ে) রাজনীতি প্রায়ই সুস্থ রাজনীতির উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
অসুস্থ রাজনীতিঃ
অসুস্থ রাজনীতি হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে রাজনীতি জনগণের সেবার পরিবর্তে ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হয়।
এর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার: রাজনীতিবিদরা নিজেদের বা তাদের ঘনিষ্ঠদের সুবিধার জন্য জনগণের সম্পদ লুট করেন। যেমন, সরকারি প্রকল্পের টাকা ব্যক্তিগতভাবে হাতিয়ে নেওয়া।বিভেদ সৃষ্টি: ধর্ম, জাতি, ভাষা বা অঞ্চলের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে ভোট বা সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা। উদাহরণ হিসেবে, নির্বাচনের সময় উসকানিমূলক বক্তৃতা।
মিথ্যা প্রচারণা: জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য ভুয়া তথ্য বা অসম্পূর্ণ সত্য ছড়ানো। যেমন, অসম্ভব প্রতিশ্রুতি দেওয়া যা পূরণ করা সম্ভব নয়।গণতন্ত্রের অবক্ষয়: নির্বাচনে কারচুপি, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ বা বিরোধীদের দমন করা। উদাহরণ হিসেবে, এমন দেশ যেখানে একই দল বা ব্যক্তি দশকের পর দশক ক্ষমতায় থাকে এবং বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করা হয়।
জনগণের প্রতি উদাসীনতা: জনসাধারণের সমস্যা (দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অশিক্ষা) উপেক্ষা করে শুধু ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা। যেমন, জনগণের প্রতিবাদ সত্ত্বেও অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দেওয়া।তুলনা ও প্রভাবসুস্থ রাজনীতি সমাজে শান্তি, উন্নতি এবং আস্থা তৈরি করে। জনগণ সরকারের ওপর ভরসা করতে পারে এবং দেশ এগিয়ে যায়।অসুস্থ রাজনীতি সমাজে অস্থিরতা, অবিশ্বাস এবং অশান্তি ছড়ায়। এর ফলে জনগণের জীবনমান নষ্ট হয় এবং দেশ পিছিয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের রাজনীতি একটি জটিল এবং গতিশীল বিষয়, যা দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতন্ত্র, সামরিক শাসন, দলীয় সংঘাত এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার মিশ্রণ দেখা যায়। বর্তমানে এটি একটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে পরিচালিত হয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধান এবং বহুদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান। তবে, এর রাজনীতির চরিত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যদুই প্রধান দলের আধিপত্য:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি প্রধান দল—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)—দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। আওয়ামী লীগ সাধারণত ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং মধ্য-ডানপন্থী মতাদর্শের ওপর জোর দেয়। এই দুই দলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং শত্রুতা দেশের রাজনীতিকে প্রায়শই অস্থিতিশীল করে তুলেছে।পরিবারতন্ত্র: রাজনীতিতে পরিবারতান্ত্রিক প্রভাব একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনা (শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা) এবং বিএনপির নেতৃত্বে খালেদা জিয়া (জিয়াউর রহমানের স্ত্রী) দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছেন। এই ধারা রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্বের উত্থানকে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করেছে।
সামরিক হস্তক্ষেপের ইতিহাস:
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক শাসন বারবার প্রভাব ফেলেছে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদের পতনের পর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও সামরিক বাহিনীর ছায়া রাজনীতিতে মাঝেমধ্যে অনুভূত হয়।
ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা: বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ১৯৯০ এর গণআন্দোলন এবং সাম্প্রতিক ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব—ছাত্ররা রাজনৈতিক পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। প্রধান দলগুলোর শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন রয়েছে, যেমন আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ এবং বিএনপির ছাত্রদল।
ধর্মীয় প্রভাব: রাজনীতিতে ধর্মীয় শক্তি, বিশেষ করে ইসলামপন্থী দলগুলো (যেমন জামায়াতে ইসলামী), মাঝেমধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে। ১৯৮৮ সালে এরশাদের আমলে সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়, যা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলেছে। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট (২০২৫ পর্যন্ত)২০২৪ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া জনবিপ্লব সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়। এর ফলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, এবং দেশে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা এবং জনগণের ক্ষমতার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। তবে, নতুন সরকার গঠন, সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে।বিএনপি এবং অন্যান্য দলগুলো এখন সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক মাঠে ফিরছে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের পর দলটির ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে। এছাড়া, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মতো নতুন ছাত্রনেতৃত্বাধীন দলের উত্থানও রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
চ্যালেঞ্জসমূহদুর্নীতি: রাজনীতিবিদদের মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ জনগণের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
সহিংসতা: নির্বাচনকালীন সহিংসতা এবং দলীয় সংঘর্ষ রাজনীতির একটি অন্ধকার দিক।গণতন্ত্রের দুর্বলতা: নির্বাচনে কারচুপি, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হ্রাস এবং বিরোধীদের দমন গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।অর্থনৈতিক চাপ: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি একটি জটিল এবং গতিশীল বিষয়, যা দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতন্ত্র, সামরিক শাসন, দলীয় সংঘাত এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার মিশ্রণ দেখা যায়। বর্তমানে এটি একটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে পরিচালিত হয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধান এবং বহুদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান। তবে, এর রাজনীতির চরিত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যদুই প্রধান দলের আধিপত্য:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি প্রধান দল—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)—দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। আওয়ামী লীগ সাধারণত ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং মধ্য-ডানপন্থী মতাদর্শের ওপর জোর দেয়। এই দুই দলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং শত্রুতা দেশের রাজনীতিকে প্রায়শই অস্থিতিশীল করে তুলেছে।পরিবারতন্ত্র: রাজনীতিতে পরিবারতান্ত্রিক প্রভাব একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনা (শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা) এবং বিএনপির নেতৃত্বে খালেদা জিয়া (জিয়াউর রহমানের স্ত্রী) দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছেন। এই ধারা রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্বের উত্থানকে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করেছে।
সামরিক হস্তক্ষেপের ইতিহাস:
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক শাসন বারবার প্রভাব ফেলেছে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদের পতনের পর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও সামরিক বাহিনীর ছায়া রাজনীতিতে মাঝেমধ্যে অনুভূত হয়।
ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা: বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ১৯৯০ এর গণআন্দোলন এবং সাম্প্রতিক ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব—ছাত্ররা রাজনৈতিক পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। প্রধান দলগুলোর শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন রয়েছে, যেমন আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ এবং বিএনপির ছাত্রদল।
ধর্মীয় প্রভাব: রাজনীতিতে ধর্মীয় শক্তি, বিশেষ করে ইসলামপন্থী দলগুলো (যেমন জামায়াতে ইসলামী), মাঝেমধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে। ১৯৮৮ সালে এরশাদের আমলে সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়, যা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলেছে। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট (২০২৫ পর্যন্ত)২০২৪ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া জনবিপ্লব সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়। এর ফলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, এবং দেশে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা এবং জনগণের ক্ষমতার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। তবে, নতুন সরকার গঠন, সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে।বিএনপি এবং অন্যান্য দলগুলো এখন সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক মাঠে ফিরছে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের পর দলটির ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে। এছাড়া, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মতো নতুন ছাত্রনেতৃত্বাধীন দলের উত্থানও রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
চ্যালেঞ্জসমূহদুর্নীতি: রাজনীতিবিদদের মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ জনগণের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
সহিংসতা: নির্বাচনকালীন সহিংসতা এবং দলীয় সংঘর্ষ রাজনীতির একটি অন্ধকার দিক।গণতন্ত্রের দুর্বলতা: নির্বাচনে কারচুপি, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হ্রাস এবং বিরোধীদের দমন গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।অর্থনৈতিক চাপ: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট (২০২৫)২০২৪-এর জনবিপ্লবের প্রভাব২০২৪ সালের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদ শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক মোড়। আন্দোলনের সময় সরকারের কঠোর দমননীতি, ইন্টারনেট বন্ধ এবং শত শত মানুষের মৃত্যু জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারের লক্ষ্য হলো সংস্কারের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ তৈরি করা। তবে, এই পরিবর্তনের পরও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখনো পুরোপুরি ফিরে আসেনি।প্রধান দলগুলোর অবস্থান
আওয়ামী লীগ: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা এই দলটি এখন সংকটে। হাসিনার অনুপস্থিতিতে দলটির নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন বা আত্মগোপনে আছেন। তবে, দলটির গ্রামীণ ভিত্তি এখনো শক্তিশালী, এবং ভবিষ্যতে তারা পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করতে পারে।
বিএনপি: খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার পর এখন সুযোগ দেখছে। ২০২৪-এর আন্দোলনে তারা সরাসরি নেতৃত্ব না দিলেও জনগণের সমর্থন ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে, দলের অভ্যন্তরীণ বিভেদ এবং তরুণ নেতৃত্বের অভাব তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।
জামায়াতে ইসলামী: এই দলটি আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে এবং তাদের সাংগঠনিক শক্তি ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে, তাদের বিতর্কিত ইতিহাস (মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা) তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দেয়।
নতুন শক্তি: জুলাই বিপ্লবের পর ছাত্র ও তরুণদের মধ্য থেকে নতুন রাজনৈতিক শক্তি উঠে আসছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর মতো দলগুলো গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।সুস্থ ও অসুস্থ রাজনীতির প্রতিফলনসুস্থ দিক: ২০২৪-এর আন্দোলন দেখিয়েছে যে জনগণ গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতার জন্য সোচ্চার। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি (যেমন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন) সুস্থ রাজনীতির আশা জাগায়।অসুস্থ দিক: আওয়ামী লীগের শাসনকালে নির্বাচনে কারচুপি, বিরোধীদের দমন এবং দুর্নীতি রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। এছাড়া, দলীয় সহিংসতা এবং প্রতিশোধমূলক রাজনীতি এখনো বড় সমস্যা।ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাবাংলাদেশের রাজনীতি এখন একটি সন্ধিক্ষণে। অন্তর্বর্তী সরকার যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করতে পারে, তবে গণতন্ত্র শক্তিশালী হতে পারে। কিন্তু পুরোনো দলগুলো যদি আবার ক্ষমতার লড়াইয়ে পুরোনো ধরনের রাজনীতি চালিয়ে যায়, তবে অস্থিরতা বাড়তে পারে। তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ তারাই এখন পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি।উদাহরণ ও বিশ্লেষণদুর্নীতির উদাহরণ: আওয়ামী লীগের আমলে বড় বড় প্রকল্পে (যেমন পদ্মা সেতু) সাফল্য থাকলেও, ব্যাংক লুটপাট (ইসলামী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক) এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ বৃদ্ধি দুর্নীতির চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।সহিংসতার উদাহরণ: ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধীদের ওপর হামলা এবং ২০২৪-এ আন্দোলনের সময় সরকারি বাহিনীর গুলি চালানো রাজনৈতিক সহিংসতার নজির।
আশার আলো: ছাত্র আন্দোলনের সাফল্য এবং তরুণদের সচেতনতা দেখায় যে জনগণ আর নীরব থাকতে চায় না।