নিজস্ব প্রতিবেদক, রৌমারী (কুড়িগ্রাম)
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সোনাপুর গ্রাম যেন আজ নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়া এক জনপদের নাম। লাগাতার নদীভাঙ্গনে এখানকার অসংখ্য মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন। তাঁদেরই একজন শরবেশ দেওয়ানী—এলাকার সবচেয়ে বড় গৃহস্থ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি।
গত কয়েক মাস ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে তার একের পর এক ফসলি জমি নদীতে তলিয়ে যায়। সর্বশেষ কয়েকদিন আগে নিজ বসতভিটাটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তিনি সম্পূর্ণ নিঃস্ব। ভিটেমাটি হারিয়ে পাগলপ্রায় শরবেশ দেওয়ানী খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। কোথায় যাবেন, কিভাবে বাঁচবেন—সে দিশাও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
বাঁচার তাগিদে নদীর কিনারে একটি অস্থায়ী ছাপড়া তৈরি করে রাত যাপন করছিলেন। কিন্তু গতরাতের ঝড়ো বাতাসে সেই সামান্য আশ্রয়টুকুও নদীতে ভেসে গেছে। এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন শরবেশ দেওয়ানী।
তার ভাতিজা জামাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, “চোখের সামনে সবকিছু নদী কেড়ে নিয়েছে। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, খাবার নেই, বাঁচার কোনো উপায় নেই।”
সোনাপুর গ্রামবাসীদের ভাষ্য, নদীভাঙ্গনের প্রকোপ দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। অথচ এখনও পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা তাদের কাছে পৌঁছেনি। নদীভাঙ্গন কবলিত মানুষেরা বলছেন,
“আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা চাই দ্রুত নদীভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ভাঙ্গন রোধে বেশ কিছু প্রকল্পের প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা নদীর গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে নদীভাঙ্গন রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অচিরেই রৌমারীর বিস্তীর্ণ জনপদ মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার শঙ্কা করছেন সচেতন মহল।