নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার বাড়ি ও জমি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি বিশেষ আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আদালতের এই নির্দেশনায় মোট ৬ কোটি ২১ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হবে।
দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, যেসব সম্পত্তির ওপর ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বাড়ি (বারিধারা)
ঢাকার বারিধারা আবাসিক এলাকার ‘কে’ ব্লকের ১০ নম্বর রোডে ২০ নম্বর প্লটের একটি বাড়ি। এর মালিক শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। বাড়িটির বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
খুলনার জমি (একাধিক মালিক)
শেখ রেহানা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে খুলনায় রয়েছে ৮৭ দশমিক ৭০ শতাংশ জমি। জমিটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।
টুঙ্গিপাড়ার জমি (শেখ রেহানা)
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ রেহানার নামে রয়েছে ১৯ শতাংশ জমি, যার মূল্য ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
খুলনার জমি (রাদওয়ান ও আজমিনা)
শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের নামে খুলনায় রয়েছে আরও ৮৭ দশমিক ৭০ শতাংশ জমি, যার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ৪১ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা।
দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম আদালতে করা আবেদনে উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও রাজধানীর পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তাঁরা তাঁদের নামীয় এসব স্থাবর সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তর ও স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন। তাই এসব সম্পদ ক্রোক করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে।
এর আগেও একই আদালত শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এছাড়া, গতকাল (মঙ্গলবার) আদালত শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের গুলশানের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ দেন।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলমান তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে সম্পদের আরও অনুসন্ধান ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তাঁর পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই পরিবার ঘিরে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ বরাবরই রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।