দৈনিক নতুন কলম :
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, “সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের মাধ্যমে কেউ ক্ষমতায় এলেও, সেই শাসক দানবে পরিণত হতে পারে।” তিনি বলেন, “তাই মৌলিক রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”
শনিবার দুপুরে রংপুরের আরডিআরএস হল রুমে সুজন আয়োজিত ‘জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আবু সাঈদের শহীদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ সভায় ড. বদিউল বলেন, “আবু সাঈদসহ অনেক ছাত্র দেশের মৌলিক সংস্কারের দাবিতে জীবন দিয়েছিল। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা আশাবাদী,রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংবিধান সংস্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একটি জাতীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান সরকার অধ্যাদেশ জারি করে কিছু জরুরি সংস্কার শুরু করতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা জরুরি।”
ছাত্র রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, “ছাত্রদের রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ অব্যাহত থাকা উচিত। তবে তারা যেন লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত না হয়। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ হওয়া জরুরি।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “ছাত্রলীগকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করার দিন থেকেই হাসিনার পতনের সূচনা হয়েছিল।”
সংসদীয় সংস্কার প্রসঙ্গে ড. বদিউল বলেন, “বাংলাদেশে দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রয়োজন। উচ্চকক্ষে অর্ধেক দলীয় ও অর্ধেক নির্দলীয় প্রতিনিধি থাকা উচিত, যাতে সমাজের সব স্তরের সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। এই উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষে জনস্বার্থবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত হলে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।”
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যোগ্য, সৎ ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের মনোনয়নের জন্য আগেভাগেই যাচাই-বাছাই করতে হবে। প্রার্থীদের হলফনামার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া কার্যকর করা যেতে পারে।” পাশাপাশি দলগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর সুজনের সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু। বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলিপ সরকার, দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শশাঙ্ক বরণ রায়, আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রাজেশ দে রাজু, অ্যাডভোকেট জোবাইদুল ইসলাম, মাহে আলম, সমাজকর্মী মঞ্জুশ্রী সাহা প্রমুখ।
আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, আগামী বাংলাদেশের জন্য সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা, নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার কোনো বিকল্প নেই।
সভা শেষে উপস্থিত সকলে একটি জাতীয় সনদের প্রতি সম্মতি জানিয়ে সম্মিলিতভাবে সংস্কার ও পরিবর্তনের পথে এগিয়ে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।