1. admin@notunkalom.com : 7mbot :
  2. mfaruqi805@gmail.com : দৈনিক নতুন কলম : দৈনিক নতুন কলম
রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ:
সোহাগ হত্যাকাণ্ড ও দেশজুড়ে সহিংসতার প্রতিবাদে রৌমারীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ চাঁদপুরে হামলার শিকার মসজিদের ইমাম মাওলানা ইমাম নুরুল আমিন মাদানী ইন্তেকাল করেছেন পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যা: সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে লাশের ওপর লাফানোর বিভৎসতা নীরব শক্তি—বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের পুনরাবির্ভাব চর রাজিবপুরে পানিতে ডুবে শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু রৌমারীতে মাদক প্রতিরোধ কমিটি গঠিত: সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রংপুরে ৩৩ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করল জামায়াত রৌমারীতে রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশা চালক দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন উজান ঝগড়ার চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক আবুল কাশেমকে বিদায়ী সংবর্ধনা নদী ভাঙনের মানুষ: এক অন্তহীন ট্রাজেডি

যতো দোষ নন্দ ঘোষ।পুলিশ যেন বলির পাঠা।

দৈনিক নতুন কলম
  • প্রকাশিত : রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫
  • ৩৮ দেখা হয়েছে

এম এ ফারুকী (রৌমারী – কুড়িগ্রাম):

ঈদ—একটি পবিত্র আনন্দের দিন। ঈদুল আজহার মাহাত্ম্য হলো ত্যাগের আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করা, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয় বস্তু কুরবানি করা। মুসলমানরা বছরের এই বিশেষ দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠে নতুন জামা-টুপিতে সজ্জিত হয়ে ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেন। অতীতের গুনাহ মাফ চেয়ে তারা আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন, মোনাজাতে চোখ ভেজান। তারপর শুরু হয় কুরবানির প্রস্তুতি—কারো উঠানে গরু, কারো উঠোনে ছাগল, কোথাও মহিষ, আবার কোথাও উট। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের হাসিমুখে ঈদের আনন্দ হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ।

কিন্তু এই চিরচেনা পবিত্র দৃশ্যপটের পেছনে রৌমারীর মতো এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘটেছে এমন কিছু ঘটনা, যা ঈদের পবিত্রতা এবং সামাজিক নিরাপত্তা—উভয়কেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। রৌমারী উপজেলার কিছু অসাধু মানুষ, ধর্মীয় অনুভূতি ও সামাজিক দায়িত্ববোধকে তাচ্ছিল্য করে, ঈদের দিনেও বসিয়েছে জুয়ার আসর। সকাল হতেই তারা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, গোপনে জুয়া খেলায় মেতে ওঠে। ঈদের ব্যস্ততা এবং পুলিশের সীমিত জনবলকে পুঁজি করে তারা পরিচালনা করে তাদের অবৈধ কার্যকলাপ।

রৌমারীর ভৌগোলিক অবস্থান এমনিতেই চ্যালেঞ্জিং। দুর্গম অঞ্চল, নাজুক সড়ক ব্যবস্থা, সীমিত প্রযুক্তিগত সুবিধা—সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাটা এখানকার পুলিশের জন্য সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে ঈদের মতো দিনে, যেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি, সেখানে বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা জুয়ার আসরগুলোতে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। জুয়ারিদের একটি শক্তিশালী সোর্স নেটওয়ার্ক রয়েছে। মোবাইল ফোনে তারা মুহূর্তেই খবর পেয়ে যায়—পুলিশ কোথায়, কখন আসছে। ফলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই তারা গা-ঢাকা দেয়, এবং যেন কিছুই ঘটেনি—এমন ভান করে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যায়।

এলাকাবাসীর অনেকেই এই অবস্থায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, কিছু মানুষের অসৎ আচরণ পুরো এলাকার সম্মান ক্ষুণ্ণ করছে। কাঁঠালবাড়ি, পাখি উড়া, চেংটাপাড়া সহ নানা গ্রামের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—এইসব অপরাধীরা কারো কথায় কর্ণপাত করে না, পুলিশের উপস্থিতিকে তো তারা একেবারেই পাত্তা দেয় না। তারা এমন জায়গায় জুয়ার আসর বসায় যেখানে আইন পৌঁছতেই পারে না। এতে শুধু সামাজিক শৃঙ্খলাই নষ্ট হচ্ছে না, তরুণ প্রজন্মের ওপরও পড়ছে বিরূপ প্রভাব।

এই পরিস্থিতিতে রৌমারী থানার তদন্ত কর্মকর্তা নন্দলাল বলেন, রৌমারীর যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল এবং এলাকার ভৌগোলিক গঠন অনেক সময় পুলিশের চলাচলকে কঠিন করে তোলে। জুয়ার আয়োজনগুলো গোপনে হয় এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। গোপন সূত্রে খবর পেলেও অভিযানে গিয়ে দেখা যায়—জুয়ারিরা আগেই পালিয়ে গেছে। তিনি আশ্বাস দেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ধরণের অপরাধ দমন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

তবে প্রশ্ন ওঠে, দায় কি শুধু পুলিশের? সমাজের প্রতিটি সদস্য যদি নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করত, তাহলে এমন অনৈতিকতার জায়গা তৈরি হতো না। যখন সমাজের কোনো একটি শ্রেণি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়, তখন সেটি পুরো সমাজের নৈতিক কাঠামোকেই ধ্বংস করে দেয়। শুধু আইন প্রয়োগ করে নয়, সমাজকে সচেতন করেই এই ধরনের অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব।

জুয়ার মতো নৈতিক অবক্ষয়ের মূল উৎপাটনে দরকার জনসচেতনতা, সামাজিক নেতৃবৃন্দের সক্রিয় অংশগ্রহণ, এবং পুলিশের সাথে জনগণের সুসম্পর্ক। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার ছাড়া দুর্গম অঞ্চলে আইন প্রয়োগকে সফল করা কঠিন। মোবাইল নজরদারি ইউনিট, ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার কিংবা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

একটা প্রবাদ আছে—“যতো দোষ নন্দ ঘোষ।” আমরা যেন সেই ভুলে না পড়ি। প্রশাসনকে এককভাবে দোষারোপ না করে নিজেদের দায় স্বীকার করে সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তোলা জরুরি। না হলে ঈদের পবিত্রতা হরণ হবে, সমাজে অস্থিরতা বাড়বে, আর আমরা নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যৎকে ঠেলে দেব অনিশ্চয়তার দিকে।

ঈদ শুধু পশু কুরবানির দিন নয়, আত্মশুদ্ধির দিনও। এই দিনে যেমন আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানি করি, তেমনি আমাদের উচিত মনের পশুত্ব, লোভ, অবিশ্বাস, এবং অন্যায়ের প্রতি মূক সমর্থনকেও কুরবানি করা। তাহলেই সমাজ হবে সত্যিকার অর্থে শান্তির, ন্যায়বিচারের এবং সহাবস্থানের একটি জায়গা

অনুগ্রহ করে খবরটি শেয়ার করুন....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
 © দৈনিক নতুন কলম স্বত্বাধিকারী সংরক্ষিত।
Theme Customized BY LatestNews