নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক নতুন কলমঃ
‘চুরিতো চুরি, তার উপর সিনা চুরি’ — এমনই ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায়। জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রৌমারী জোনাল অফিসে বিদ্যুৎ বিল তৈরিতে বড় ধরনের জালিয়াতি ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে ইউনিট সংখ্যা বাড়িয়ে, পুরনো বিল আবার দেখিয়ে এবং না গিয়ে অনুমানভিত্তিক বিল তৈরি করে একাধিক গ্রাহককে বেকায়দায় ফেলা হচ্ছে।
২৪ জুন, মঙ্গলবার বিকালে রৌমারী থানার অন্তর্গত বাগেরহাট বাজার এলাকায় কারেন্ট বিল বিতরণে যান পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের মিটার রিডার মোঃ মিন্টু সরকার। গ্রাহকরা বিল হাতে পেয়ে চমকে ওঠেন। দেখা যায়, কারো কারো বিল ৫,০০০ টাকার উপরে চলে গেছে, যা অস্বাভাবিকভাবে বেশি।
বাগেরহাট বাজারের ব্যবসায়ী বাবুল আক্তার অভিযোগ করে বলেন, “আমার মিটারে আজ পর্যন্ত ১৫৭৮ ইউনিট দেখাচ্ছে, অথচ বিলের কাগজে লেখা হয়েছে ১৬৩০ ইউনিট। মে মাসে মাত্র ৩০ ইউনিট ব্যবহারের জন্যই ৬২০ টাকার বেশি বিল এসেছে। অথচ স্বাভাবিক হিসেবে তা ৩০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। এর ওপর, আমি গত ২৪ মার্চে তৌকির হোসেনের মাধ্যমে ২৩৬৭ টাকা বিল পরিশোধ করেছি, সেই বিলও আবার নতুন করে দেখানো হয়েছে।”
বাজারের আরও অনেক ব্যবসায়ী জানান, প্রায় প্রতিটি মিটারে ৫০ থেকে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বেশি দেখিয়ে বিল তৈরি করা হয়েছে। মিন্টু সরকার জানান, “গত দুই মাস অফিস থেকেই বিল তৈরি করা হয়েছে। কেউ মাঠে এসে মিটার রিডিং নেয়নি।”
এমনকি, কেউ কেউ দেখেছেন — যেখানে ৩৩৫ ইউনিট ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে বিল করা হয়েছে ৩৭৫ ইউনিটের। আবার ৩০ ইউনিট ব্যবহার দেখিয়ে বিল এসেছে ৬২০ টাকা, যেখানে তা হওয়া উচিত ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে।
একই এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী নুরুল হক জানান, “বিনা কারণে বেশি বিল দিয়ে আমরা অতিষ্ঠ। আমাদের জিজ্ঞেস না করেই অফিসে বসে যারা যা খুশি তাই লিখছে।”
এ ব্যাপারে মিন্টু সরকার বলেন, “তৌকির হোসেন নামের একজন ব্যক্তি প্রতারণা করে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। সেই বিলগুলো মুছেনি অফিস। যার ফলে গ্রাহকরা এক বিল দুইবার দিচ্ছে।”
অভিযোগ উঠেছে — কোনো দুর্যোগ না থাকা সত্ত্বেও প্রায় ১০ কিলোমিটার দূর থেকে ‘দূরদৃষ্টি’ দিয়ে বিল তৈরি করা হচ্ছে। মিন্টু সরকার নিজেও স্বীকার করেছেন, “হ্যাঁ, এটা অন্যায়।”
এর ওপর, বিদ্যুৎ বিভ্রাট যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। স্থানীয়দের অভিযোগ, “দিন-রাত মিলিয়ে ৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। এর মধ্যে আবার অতিরিক্ত বিল দিয়ে আমাদের নিঃশেষ করে দিচ্ছে।”
বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মঙ্গলবার মিন্টু সরকারকে কিছু সময়ের জন্য আটকিয়ে রাখেন। পরে চরশৌলমারী অফিস থেকে আরেক বিল রিডার তাকে উদ্ধারে আসেন। নাম-পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তিনি পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রৌমারী জোনাল অফিসের ডিজিএম দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার সরাসরি ও মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী একটিই দাবি জানিয়েছেন—
১. অফিসে বসে অনুমানভিত্তিক বিল লেখা বন্ধ করতে হবে।
২. পুরনো বিলের সদুত্তর দিয়ে নতুন করে সঠিক বিল তৈরি করতে হবে।
৩. বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে।
৪. অংশগ্রহণমূলক তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।