রৌমারী - কুড়িগ্রাম ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যশোরের মণিরামপুরে দুই ঘন্টার কর্মবিরতিতে সেবা বন্ধে রোগীদের ক্ষোভ! ‎ নির্বাচনী প্রচারনা স্থগিতঃ ‎মণিরামপুরে বিভিন্ন স্থানে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়া পিরোজপুর জেলা সরকারি চাকুরিজীবী কল্যাণ পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত,সভাপতি শামসুদ্দোহা- সম্পাদক সাদ্দাম চুয়াডাঙ্গার গয়েশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি ‘মাদককারবারী’ আহত: পরিবার বলছে নিহত, চলছে শোকের মাতম ‎মণিরামপুরে শিক্ষানীতি বহির্ভূত কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত প্রধান শিক্ষক মান্নান শোকজ!করছেন দৌড়ঝাঁপ রাজাপুরে বৈদ্যুতিক শর্ট-সার্কিটে দিনমজুর “ফজলুর” বসতঘর পুড়ে ছাই, খোলা আকাশের নিচে নিঃস্ব পরিবার!! চুয়াডাঙ্গা যৌথবাহিনীর অভিযানে তিনজন গ্রেফতার বোমা, দেশীয় অস্ত্র ও হরিণের চামড়া উদ্ধার। মণিরামপুরের দূর্বাডাঙ্গায় আট দলীয় ফাইনাল ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত গাজীপুরের সফিপুরে বাউল আবুল সরকারের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত।
সর্বশেষ সংবাদ :
যশোরের মণিরামপুরে দুই ঘন্টার কর্মবিরতিতে সেবা বন্ধে রোগীদের ক্ষোভ! ‎ নির্বাচনী প্রচারনা স্থগিতঃ ‎মণিরামপুরে বিভিন্ন স্থানে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়া পিরোজপুর জেলা সরকারি চাকুরিজীবী কল্যাণ পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত,সভাপতি শামসুদ্দোহা- সম্পাদক সাদ্দাম চুয়াডাঙ্গার গয়েশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি ‘মাদককারবারী’ আহত: পরিবার বলছে নিহত, চলছে শোকের মাতম ‎মণিরামপুরে শিক্ষানীতি বহির্ভূত কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত প্রধান শিক্ষক মান্নান শোকজ!করছেন দৌড়ঝাঁপ রাজাপুরে বৈদ্যুতিক শর্ট-সার্কিটে দিনমজুর “ফজলুর” বসতঘর পুড়ে ছাই, খোলা আকাশের নিচে নিঃস্ব পরিবার!! চুয়াডাঙ্গা যৌথবাহিনীর অভিযানে তিনজন গ্রেফতার বোমা, দেশীয় অস্ত্র ও হরিণের চামড়া উদ্ধার। মণিরামপুরের দূর্বাডাঙ্গায় আট দলীয় ফাইনাল ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত গাজীপুরের সফিপুরে বাউল আবুল সরকারের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত।

এটা দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যার বৈধ সংস্করণ

ছবি সংগৃহীত

এটা দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যার বৈধ সংস্কর

মোঃ মাহবুবুল আলম ফারুকী
সহকারী শিক্ষক(ধর্ম)
ইসলাম শিক্ষা
কাজাইকাটা উচ্চ বিদ্যালয়।

ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির হোসেন আকাশে মারা যাননি। তিনি মরে গিয়েছিলেন আরও আগে—যেদিন তার প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট অন্যত্র চলে গিয়েছিল। যেদিন সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, আধুনিক প্রযুক্তির কোনো প্রয়োজন নেই; যে পুরনো, ক্লান্ত, অবসন্ন বিমান আছে, সেটিই যথেষ্ট।
আর এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে যে কেবল তৌকির হারালেন প্রাণ, তা নয়। নিচে থাকা শিশু শিক্ষার্থীরাও হারিয়েছে জীবন। তাই এই মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা নয়। এটা সিস্টেমের হত্যা—ব্যবস্থার মিথ্যাচার এবং রাষ্ট্রীয় বিশ্বাসঘাতকতার ফলাফল।

বাংলাদেশে আজও ১৯৭৬ সালের জঙ্গালবাহিত প্রশিক্ষণ বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে। ৪৮ বছরের পুরনো এসব বিমানের অধিকাংশ যন্ত্রাংশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঝুঁকিপূর্ণ এবং অচল। অথচ এইসব বিমানে প্রশিক্ষণ নিতে হয় নতুন প্রজন্মের পাইলটদের, যাদের উপর আকাশপথের নিরাপত্তা নির্ভর করে। এ এক চরম পরিহাস—মাটিতে যেসব লোহা জাদুঘরে থাকার কথা, সেগুলো দিয়েই আকাশে উড়তে হয় ভবিষ্যতের রক্ষকদের।

প্রশ্ন জাগে, কেন এখনো আধুনিক প্রশিক্ষণ বিমান কেনা হয়নি? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যে উত্তর আমরা পাই, তা অন্ধকারে ডুবে থাকে—বাজেট নেই, নাকি বরাদ্দ দেওয়া বাজেট চলে গেছে অন্য কোনো খাতে?
দুর্নীতির আঙুল উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। কারণ রাষ্ট্র যখন চাইলে একটি মেগা প্রজেক্টে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে, তখন কিছু প্রশিক্ষণ বিমানের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে না পারা কেবল অজুহাত নয়, অপরাধ।

তৌকির হোসেন একা উড়ছিলেন না। তিনি ছিলেন সেই হাজারো তরুণ পাইলটের প্রতিনিধি, যাদের কাঁধে জাতির আকাশ রক্ষার ভার দেওয়া হয়, কিন্তু হাতে তুলে দেওয়া হয় মৃত্যু যন্ত্র। একটি রাষ্ট্র কীভাবে এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারে? একজন পাইলট যখন তার যন্ত্রকে বিশ্বাস করতে পারে না, তখন সে আর সৈনিক থাকে না, সে হয়ে ওঠে এক ত্যাগের পাত্র। কিন্তু এই আত্মত্যাগ সম্মানের নয়, এ এক বাধ্যতামূলক নিঃশেষ হওয়া।

এখানে মৃত্যু ঘটেছে শুধু আকাশে নয়, মাটিতেও। কারণ ওই পুরনো বিমানের দুর্ঘটনায় একটি স্কুল ভবনের ওপর ধসে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে নিচে থাকা শিশুরাও। তারা জানত না, রাষ্ট্রের সিস্টেম কতটা ফাঁপা, কতটা বিপজ্জনক। তারা ছিল নিষ্পাপ—তবু রাষ্ট্রের ব্যর্থতার শিকার।
এই শিশুরাও কি তাহলে বাজেটের শূন্য খাতে গণনা হবে?

এই প্রশ্ন আমাদের বিবেককে নাড়া দেওয়ার কথা। কিন্তু আমরা অভ্যস্ত। পাইলট মারা গেলে শোক, শিশু মারা গেলে দুঃখ, এরপর আবার পুরনো পথে হাঁটা। আমাদের রাষ্ট্র যেন ভোলার মেশিন—অপরাধ ঘটায়, ভুলে যায়, আবার ঘটায়।

তৌকিরের পরিবার, তার সহকর্মীরা, এবং সারা দেশের বিবেকবান নাগরিকদের মনে আজ একটাই দাবি—এই মৃত্যু কেবল শোক নয়, এটি হতে হবে একটি প্রতিবাদের শুরুর বিন্দু। আমাদের জানতে হবে, কেন একজন তরুণ পাইলটকে আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়া আকাশে পাঠানো হয়? কেন সেফটি মেকানিজম যথাযথভাবে কাজ করে না? কেন রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি ও গাফিলতির শিকার হয়ে প্রাণ ঝরে পড়ে এইভাবে?

কিছু মৃত্যু রাষ্ট্রকে প্রশ্নে ফেলে দেয়। তৌকিরের মৃত্যু, নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের মৃত্যু—সেসব প্রশ্নের সবচেয়ে রক্তাক্ত উত্তর।

রাষ্ট্র যদি চায় সত্যিকার উন্নয়ন, তাহলে তাকে উন্নয়ন শুরু করতে হবে সচেতনতা দিয়ে, জীবন-নিরাপত্তা দিয়ে—not just concrete infrastructures.

তৌকিরদের আর হারাতে চাই না আমরা। শিশুরা যেন মাটিতে খেলতে গিয়ে আকাশ থেকে ভেঙে পড়া ধ্বংসযন্ত্রের নিচে চাপা না পড়ে।
সেই আশায় লিখছি,
সেই আশা নিয়ে বেঁচে আছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আলোচিত সংবাদ

যশোরের মণিরামপুরে দুই ঘন্টার কর্মবিরতিতে সেবা বন্ধে রোগীদের ক্ষোভ! ‎

এটা দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যার বৈধ সংস্করণ

Update Time : ০৪:১৩:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

এটা দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যার বৈধ সংস্কর

মোঃ মাহবুবুল আলম ফারুকী
সহকারী শিক্ষক(ধর্ম)
ইসলাম শিক্ষা
কাজাইকাটা উচ্চ বিদ্যালয়।

ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির হোসেন আকাশে মারা যাননি। তিনি মরে গিয়েছিলেন আরও আগে—যেদিন তার প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট অন্যত্র চলে গিয়েছিল। যেদিন সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, আধুনিক প্রযুক্তির কোনো প্রয়োজন নেই; যে পুরনো, ক্লান্ত, অবসন্ন বিমান আছে, সেটিই যথেষ্ট।
আর এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে যে কেবল তৌকির হারালেন প্রাণ, তা নয়। নিচে থাকা শিশু শিক্ষার্থীরাও হারিয়েছে জীবন। তাই এই মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা নয়। এটা সিস্টেমের হত্যা—ব্যবস্থার মিথ্যাচার এবং রাষ্ট্রীয় বিশ্বাসঘাতকতার ফলাফল।

বাংলাদেশে আজও ১৯৭৬ সালের জঙ্গালবাহিত প্রশিক্ষণ বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে। ৪৮ বছরের পুরনো এসব বিমানের অধিকাংশ যন্ত্রাংশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঝুঁকিপূর্ণ এবং অচল। অথচ এইসব বিমানে প্রশিক্ষণ নিতে হয় নতুন প্রজন্মের পাইলটদের, যাদের উপর আকাশপথের নিরাপত্তা নির্ভর করে। এ এক চরম পরিহাস—মাটিতে যেসব লোহা জাদুঘরে থাকার কথা, সেগুলো দিয়েই আকাশে উড়তে হয় ভবিষ্যতের রক্ষকদের।

প্রশ্ন জাগে, কেন এখনো আধুনিক প্রশিক্ষণ বিমান কেনা হয়নি? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যে উত্তর আমরা পাই, তা অন্ধকারে ডুবে থাকে—বাজেট নেই, নাকি বরাদ্দ দেওয়া বাজেট চলে গেছে অন্য কোনো খাতে?
দুর্নীতির আঙুল উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। কারণ রাষ্ট্র যখন চাইলে একটি মেগা প্রজেক্টে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে, তখন কিছু প্রশিক্ষণ বিমানের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে না পারা কেবল অজুহাত নয়, অপরাধ।

তৌকির হোসেন একা উড়ছিলেন না। তিনি ছিলেন সেই হাজারো তরুণ পাইলটের প্রতিনিধি, যাদের কাঁধে জাতির আকাশ রক্ষার ভার দেওয়া হয়, কিন্তু হাতে তুলে দেওয়া হয় মৃত্যু যন্ত্র। একটি রাষ্ট্র কীভাবে এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারে? একজন পাইলট যখন তার যন্ত্রকে বিশ্বাস করতে পারে না, তখন সে আর সৈনিক থাকে না, সে হয়ে ওঠে এক ত্যাগের পাত্র। কিন্তু এই আত্মত্যাগ সম্মানের নয়, এ এক বাধ্যতামূলক নিঃশেষ হওয়া।

এখানে মৃত্যু ঘটেছে শুধু আকাশে নয়, মাটিতেও। কারণ ওই পুরনো বিমানের দুর্ঘটনায় একটি স্কুল ভবনের ওপর ধসে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে নিচে থাকা শিশুরাও। তারা জানত না, রাষ্ট্রের সিস্টেম কতটা ফাঁপা, কতটা বিপজ্জনক। তারা ছিল নিষ্পাপ—তবু রাষ্ট্রের ব্যর্থতার শিকার।
এই শিশুরাও কি তাহলে বাজেটের শূন্য খাতে গণনা হবে?

এই প্রশ্ন আমাদের বিবেককে নাড়া দেওয়ার কথা। কিন্তু আমরা অভ্যস্ত। পাইলট মারা গেলে শোক, শিশু মারা গেলে দুঃখ, এরপর আবার পুরনো পথে হাঁটা। আমাদের রাষ্ট্র যেন ভোলার মেশিন—অপরাধ ঘটায়, ভুলে যায়, আবার ঘটায়।

তৌকিরের পরিবার, তার সহকর্মীরা, এবং সারা দেশের বিবেকবান নাগরিকদের মনে আজ একটাই দাবি—এই মৃত্যু কেবল শোক নয়, এটি হতে হবে একটি প্রতিবাদের শুরুর বিন্দু। আমাদের জানতে হবে, কেন একজন তরুণ পাইলটকে আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়া আকাশে পাঠানো হয়? কেন সেফটি মেকানিজম যথাযথভাবে কাজ করে না? কেন রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি ও গাফিলতির শিকার হয়ে প্রাণ ঝরে পড়ে এইভাবে?

কিছু মৃত্যু রাষ্ট্রকে প্রশ্নে ফেলে দেয়। তৌকিরের মৃত্যু, নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের মৃত্যু—সেসব প্রশ্নের সবচেয়ে রক্তাক্ত উত্তর।

রাষ্ট্র যদি চায় সত্যিকার উন্নয়ন, তাহলে তাকে উন্নয়ন শুরু করতে হবে সচেতনতা দিয়ে, জীবন-নিরাপত্তা দিয়ে—not just concrete infrastructures.

তৌকিরদের আর হারাতে চাই না আমরা। শিশুরা যেন মাটিতে খেলতে গিয়ে আকাশ থেকে ভেঙে পড়া ধ্বংসযন্ত্রের নিচে চাপা না পড়ে।
সেই আশায় লিখছি,
সেই আশা নিয়ে বেঁচে আছি।