রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার চরবোয়ালমারী গ্রামের শিশু রিফাত (ছদ্মনাম) সকালে খেলতে বের হয়ে বলেছিল,
“মা, আমি খেলতে যাচ্ছি, একটু পরেই আসব।”
তার মা তখনও জানতেন না, এই “একটু পর”টাই হতে পারত তার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ ও ভীতিকর সময়।
রাস্তাটি যেখানে রিফাত খেলতে যায়, সেটি এখন আর কোনো পথ নয়—একটা মৃত্যুফাঁদ।
পাকার মাথা থেকে শুরু করে নুরুল ইসলামের বাড়ি হয়ে হাফিজাবাদ দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত এই অর্ধ কিলোমিটার সড়কে দু’পাশজুড়ে দুই ফুট গভীর গর্ত। বৃষ্টি হলে সেগুলো রূপ নেয় ছোট ছোট পুকুরে, যার পানির নিচে লুকিয়ে থাকে ভয়ংকর ফাঁদ। আর সেগুলোতে পড়ছে শিশু, হোঁচট খাচ্ছে বৃদ্ধ, থমকে যাচ্ছে স্কুলগামী পা।
এই রাস্তায় প্রতিদিন চলছে মাদ্রাসার নির্মাণসামগ্রী বহনকারী ভারী ট্রাক্টর, স্থানীয় ভাষায় যাকে কাকরা বলে। একসময় যেটি ছিল গ্রামবাসীর জীবনরেখা, এখন সেটি পরিণত হয়েছে দুর্ঘটনার গহ্বরে।
স্থানীয় যুবক সাইফুল ইসলাম স্মরণ করিয়ে দেন এক দুর্ঘটনার কথা—
“একদিন বালুভর্তি ট্রাক্টর উল্টে গেছিল রাস্তার ঐ মোড়ে। তখন বাচ্চারা পাশে খেলছিল। ভাবতেই কাঁটা দেয়—যদি একটা শিশু নিচে পড়ে যেত?”
দুইজন জনপ্রতিনিধি—ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম ও মহিলা সদস্য রেহানা পারভিন—জানান,
“আমরা মাটি ফেলে অনেকবার রাস্তাটি মেরামত করেছি, কিন্তু ট্রাক্টরগুলো প্রতিবারই সেটা আবার নষ্ট করেছে। আমাদের সাধ্য ফুরিয়ে যাচ্ছে।”
তবে ঠিকাদার হাবিবুর রহমান, যিনি মাদ্রাসার নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছেন, তাকে বারবার জানানো হলেও শুধুই আশ্বাস মেলে। মেলে না কোনো কাজের দৃশ্য।
একজন মা বলছিলেন চোখে পানি এনে:
“আমার ছেলে বলেছিল খেলতে যাচ্ছি। আমি আতঙ্কে থাকি—ফিরবে তো? ও তো জানে না কোন গর্তে তার পা ডুবে যাবে। রাস্তাটার দিকে তাকালেই বুকটা কাঁপে।”
এই রাস্তা এখন শুধুই কাদামাটি আর গর্তে ভরা না—এটি হয়ে উঠেছে একটি গ্রামের নিরুপায় আর্তনাদের প্রতিচ্ছবি।
এই প্রতিবেদন কোনো রাস্তার গল্প নয়। এটা গল্প একটি অবহেলিত জনপদের, একটি মায়ের অশ্রুর, একটি শিশুর ভয়ের, আর একটি রাষ্ট্রের নীরবতার।
“আমরা উন্নয়ন চাই, তবে কফিনের বিনিময়ে নয়” — বলছে চরবোয়ালমারী
স্থানীয়রা জোর দাবি জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যেন আর অপেক্ষা না করে। এক মুহূর্ত দেরিও হতে পারে কারো প্রাণের বিনিময়।
এই রাস্তা শুধুই মেরামতের দাবি নয়—এটা একজন মায়ের কান্না, একজন শিশুর নিরাপত্তা, এবং রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব।