
ঘুঘুর চোখ সেলাইয়ের অমানবিক কৌশল : প্রকৃতির প্রতি নির্মম আঘাত
মোঃ মাহবুবুল আলম ফারুকী
মানুষ সভ্যতার শীর্ষে পৌঁছালেও প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার নানা দৃষ্টান্ত আজও আমাদের চমকে দেয়। তারই একটি হলো ঘুঘু শিকারের ভয়ংকর কৌশল—প্রথমে একটি ঘুঘুর চোখ সেলাই করে তাকে ফাঁদে পরিণত করা, এরপর সেই পাখির ডাক ও ছটফটানিকে ব্যবহার করে তার স্বজাতিকে ফাঁদে আনা। এটি শুধু বন্যপ্রাণীর ওপর অমানবিক নির্যাতন নয়, বরং পরিবেশ ও মানবিকতার ওপরও সরাসরি আঘাত।
—
নৃশংস কৌশলের বর্ণনা
শিকারিরা একটি ঘুঘুকে ধরে সূক্ষ্ম সুতো দিয়ে তার চোখ সেলাই করে দেয়। ফলে পাখিটি স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে যায়। এরপর তাকে খাঁচায় বা ডালে বসিয়ে রাখা হয়। অন্ধ ঘুঘুটি বাঁচার তাগিদে ডানা ঝাপটাতে ও ডাকতে থাকে। আশেপাশের ঘুঘুরা ভেবে নেয় এটি তাদের ডাক—তারা কাছে আসে। সেই মুহূর্তে শিকারিরা সহজেই তাদের ধরতে সক্ষম হয়।
—
প্রাণীর প্রতি ভয়ংকর নির্যাতন
চোখ সেলাই মানে শুধু আলোহীন জীবন নয়—চিরস্থায়ী কষ্ট। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে পাখিটি কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যায়। অথচ এই নির্মমতাকে শিকারিরা দেখে তাদের শিকার ধরার সফল কৌশল হিসেবে।
—
জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি
ঘুঘু প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা বীজ ছড়িয়ে গাছ জন্মাতে সহায়তা করে, আবার কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর। এভাবে নির্বিচারে ঘুঘু শিকার করলে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক প্রজাতি কমে গেলে তা খাদ্যশৃঙ্খলের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।
—
আইন থাকলেও প্রয়োগ শিথিল
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী, কোনো বন্যপ্রাণীকে হত্যা, নির্যাতন, বিক্রি বা অবৈধভাবে শিকার করা অপরাধ। এর শাস্তি কারাদণ্ড ও জরিমানা—দুটোই হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে আইন প্রয়োগ দুর্বল। ফলে মাঠে-ঘাটে এখনও এ ধরনের শিকার অবাধে চলছে।
—
কেন সচেতনতা জরুরি
একটি ঘুঘুর চোখ সেলাই করা মানে কেবল একটি পাখিকে নয়, মানবতার বিবেককেও অন্ধ করে দেওয়া। প্রকৃতিকে ধ্বংস করলে মানুষ নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মানুষের মনে দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করা জরুরি। স্কুল-কলেজ, সামাজিক সংগঠন ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রাণী কল্যাণ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
—
উপসংহার
ঘুঘুর চোখ সেলাই করে শিকার ধরা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটি কেবল একটি পাখির প্রতি নিষ্ঠুরতা নয়, বরং প্রকৃতি ও মানবতার প্রতি অপরাধ। প্রতিটি জীবের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিটি প্রাণীর ভূমিকা অমূল্য—এই সত্য মেনে চললেই কেবল আমরা সত্যিকার অর্থে মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে পারব।