পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৭ হিজরী উদযাপন উপলক্ষ্যে দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। – দৈনিক নতুন কলম

পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৭ হিজরী উদযাপন উপলক্ষ্যে দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: September 6, 2025

মোঃ মিনারুল ইসলাম

চুুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি

আজ ১২ই রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরী (৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ) তারিখে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এই তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র জন্মদিন ও ওফাত দিবস স্মরণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনা সভার মূল বিষয়বস্তু
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দামুড়হুদা উপজেলার সুযোগ্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথি মিত্র। তিনি তার বক্তব্যে মহানবী (সা.)-এর অতুলনীয় ত্যাগ ও মানবজাতির প্রতি তার ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “মহানবীর (সা.) আদর্শ শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য এক আলোকবর্তিকা। তার জীবনাদর্শ অনুসরণ করে আমরা একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন করতে পারি।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে এইস তাসফিকুর রহমান। তিনি তার বক্তব্যে মহানবীর (সা.) শিক্ষা ও আদর্শের ওপর গভীর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “মহানবীর (সা.) দেখানো পথেই রয়েছে মানবজাতির কল্যাণ।

তার ধৈর্য, ক্ষমা, সততা এবং ন্যায়বিচারের আদর্শ আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। বিশেষ করে যুবসমাজের উচিত মহানবীর (সা.) আদর্শকে নিজেদের জীবনের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করা।”

উপস্থিত বিভিন্ন মসজিদের ইমামগণ তাদের বক্তব্যে মহানবীর (সা.) জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, মহানবী (সা.) জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের প্রতি দয়া ও সহমর্মিতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা আজো বিশ্ববাসীকে অনুপ্রাণিত করে।

একজন ইমাম মোঃ মহিউদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, “ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা হলো শান্তি, ভালোবাসা এবং ভ্রাতৃত্ব। মহানবী (সা.) সেই শিক্ষাই আমাদের দিয়ে গেছেন।”

তিনি আরো বলেন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস। প্রতি বছর আরবি ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে মুসলিম বিশ্বে এটি অত্যন্ত মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে উদযাপিত হয়। এই দিনটি একদিকে যেমন তাঁর আগমনকে স্মরণ করে, তেমনি মানবজাতির প্রতি তাঁর অতুলনীয় অবদান ও আদর্শকে নতুন করে তুলে ধরে।

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো মহানবী (সা.)-এর জীবন ও শিক্ষা থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া। তিনি এমন এক যুগে আবির্ভূত হয়েছিলেন, যখন আরব সমাজে অরাজকতা, অজ্ঞতা ও বর্বরতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল।

তাঁর আগমনে সেই সমাজে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ে এবং মানবতা নতুন জীবন ফিরে পায়। এই দিনে মুসলিমরা তাঁর আদর্শ, যেমন—সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, ক্ষমা, এবং পরোপকার সম্পর্কে আলোচনা করে।

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে উদযাপিত হয়। মুসলিমরা এই দিনে মসজিদ ও ঘরে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে, যেখানে মহানবীর (সা.) জীবন ও সিরাত (জীবনী) নিয়ে আলোচনা করা হয়।

এই মাহফিলে তাঁর শানে দরুদ ও সালাম পাঠ করা হয়। এছাড়াও, ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এই দিনে নফল রোজা রাখা, কুরআন তিলাওয়াত করা, দান-সদকা করা এবং দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য করার মতো নেক আমল করে থাকেন। অনেক জায়গায় শোভাযাত্রা ও র‌্যালির আয়োজন করা হয়, যেখানে মহানবীর (সা.) পতাকা ও বাণী নিয়ে মানুষ একত্রিত হয়।

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন নিয়ে মুসলিম বিশ্বে কিছু বিতর্কও রয়েছে। একদল আলেম ওলামা মনে করেন, এই দিনটি পালন করা বিদআত বা ইসলামে নতুন সংযোজন, কারণ মহানবী (সা.) নিজে বা তাঁর সাহাবীরা এটি পালন করেননি। তাদের মতে, ইসলামে দুইটি ঈদ—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা—ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মীয় উৎসব নেই।
অন্যদিকে, অধিকাংশ আলেম ওলামা এই দিন উদযাপনের পক্ষে মত দেন। তাঁদের মতে, এটি কোনো ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি মাধ্যম। তাঁরা যুক্তি দেন যে, মহানবীর (সা.) প্রতি ভালোবাসা ইমানের অংশ এবং তাঁর আদর্শ স্মরণ করা ইসলামে উৎসাহিত।

বর্তমান বিশ্বে যেখানে সংঘাত, বিভেদ ও হানাহানি বেড়ে চলেছে, সেখানে মহানবী (সা.)-এর আদর্শ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। তাঁর জীবন থেকে আমরা শিখি কীভাবে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে হয়, কীভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হয়, এবং কীভাবে অন্যের প্রতি সহনশীল হতে হয়।

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আমাদের এই বার্তা দেয় যে, মহানবীর (সা.) আদর্শ অনুসরণ করে আমরা একটি উন্নত ও মানবিক সমাজ গড়তে পারি। এই দিনটি কেবল একটি উৎসব নয়, বরং আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মশুদ্ধির একটি সুযোগ।

আলোচনা সভায় দামুড়হুদা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ হারুন অর রশিদ তিনি আরও বলেন, এই ধরনের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সকল রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে এক মঞ্চে একত্রিত হওয়া অত্যন্ত ইতিবাচক।

তিনি বলেন, “ধর্মীয় অনুভূতি সবার মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি বাড়ায়। আমরা এই মহান দিনে মহানবীর (সা.) আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি।”

আলোচনা সভা শেষে এক বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এই মোনাজাত পরিচালনা করেন উপজেলার একজন প্রবীণ ইমাম। মোনাজাতে মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং দেশ ও জাতির সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করা হয়।

এছাড়াও বিশ্বের সকল মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা হয়। মোনাজাতে উপস্থিত সকলের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে।

উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে উপস্থিত সকলে সাধুবাদ জানান। তারা বলেন, এই ধরনের অনুষ্ঠান সমাজে ধর্মীয় চেতনা ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগাতে সাহায্য করে। অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সফলভাবে সম্পন্ন হয়।